
রংপুরের তারাগঞ্জে আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন নুপুর রবিদাস। সাজানো হয়েছে গেট, প্যান্ডেল আর আলো ঝলমলে সাজসজ্জা। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য জবাই করা হয়েছে তিনটি খাসি। তবে উৎসবের এ দিনেও নুপুরের চোখে নেই হাসি—বাবা রূপলাল দাসের অভাব যেন সমস্ত আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।
তিন মাস আগেই মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে গিয়ে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুরের প্রদীপ দাস (৩৫)। সেই বিভীষিকাময় রাতের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি পরিবারটি।
গত ১০ আগস্ট রূপলালের বাড়িতে মেয়ের বিয়ের তারিখ নির্ধারণের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। এর একদিন আগে, ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জ-কাজিরহাট ছেতরা বটতলায় চোর সন্দেহে স্থানীয়রা রূপলাল ও প্রদীপকে আটক করে নির্মমভাবে গণপিটুনি দেয়। পরদিন সকালে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘটনাস্থলেই মারা যান রূপলাল দাস। গুরুতর আহত প্রদীপ দাস রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবারটি, স্থগিত হয় বিয়ের আয়োজন। অবশেষে তিন মাস পর আজ সেই বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সময়ে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষ থেকে রূপলালের মেয়ের বিয়েতে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন তারাগঞ্জ উপজেলা আমির এস এম আলমগীর হোসেন।
নুপুর রবিদাস বলেন, “বাবা আর দুলাভাইকে যেভাবে মেরে ফেলা হলো, তা ভুলতে পারি না। বিয়ের দিনেও মনে কষ্ট রয়ে গেছে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে পাওয়া এই সহায়তায় আমরা আনন্দিত।”
নুপুরের ছোট ভাই জয় রবিদাস বলেন, “বাবা না থাকায় সব দায়িত্ব এখন আমার ওপর। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিলেও খবর নেয় না, কিন্তু জামায়াতের নেতারা এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন—এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।”
নিহত রূপলালের স্ত্রী ভারতী রবিদাস বলেন, “ধার-দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। অনেকেই সাহায্যের কথা বললেও কেউ এগিয়ে আসেনি। জামায়াতের নেতারা এসেছেন, কিছু সহায়তা দিয়েছেন—এতে আমরা সত্যিই উপকৃত হয়েছি।”
তারাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য। জামায়াতে ইসলামী মানবতার দল, আমরা সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করি। রংপুর-২ আসনের প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষ থেকে এই অসহায় পরিবারকে সহায়তা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
অনুসন্ধানী নিউজ 











