Dhaka 6:10 am, Monday, 17 November 2025

তারাগঞ্জে বিয়ের দিন ঠিক করতে গিয়েই গণপিটুনিতে নিহত রূপলালের মেয়ের বিয়ে আজ

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:48:17 pm, Sunday, 2 November 2025
  • 75 Time View

শফিউল মন্ডল (রংপুর) প্রতিনিধি :রংপুরের তারাগঞ্জে আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন নুপুর রবিদাস। সাজানো হয়েছে গেট, প্যান্ডেল ও আলো ঝলমলে সাজসজ্জা। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য জবাই করা হয়েছে তিনটি খাসি। কিন্তু এই আনন্দঘন মুহূর্তেও নুপুরের চোখে নেই হাসি—বাবা রূপলাল দাসের অভাব যেন সব আনন্দকে ঢেকে দিয়েছে।

তিন মাস আগেই মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে গিয়েই গণপিটুনিতে প্রাণ হারান তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর এলাকার রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার প্রদীপ দাস (৩৫)। সেই রক্তাক্ত স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি রূপলালের পরিবার।

গত ১০ আগস্ট ছিল রূপলালের বাড়িতে নুপুরের বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণের অনুষ্ঠান। বরের আত্মীয় হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিঠাপুকুরের বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ রবিদাস। কিন্তু ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জ-কাজিরহাট ছেতরা বটতলায় চোর সন্দেহে স্থানীয়রা রূপলাল ও প্রদীপকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মমভাবে পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয় রূপলালকে। গুরুতর আহত প্রদীপ পরদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এই নির্মম ঘটনার পর স্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবারটি। স্থগিত হয় বিয়ের সব আয়োজন। তবে আজ, শোকের ভার নিয়েই মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে।

নুপুর রবিদাস বলেন, “আমার বিয়ের আয়োজন হয়েছে, কিন্তু মনের ভেতরে এক গভীর শূন্যতা। বাবা আর দুলাভাইকে যেভাবে মেরে ফেলা হলো, তা ভুলতে পারছি না। আসামিরা অনেকেই এখনো মুক্তভাবে ঘুরছে, কেউ কিছু বলছে না।”

নুপুরের ছোট ভাই জয় রবিদাস বলেন, “বাবা না থাকায় সব দায়িত্ব এখন আমার ওপর। হাট থেকে খাসি কিনেছি, ঘর সাজিয়েছি, উপহার প্রস্তুত করেছি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না, শুধু মামা পাশে আছে।

ভারতী রবিদাস বলেন, “স্বামী ও জামাই দুজনকেই হারিয়েছি। সংসারে তিন সন্তান—তারা কীভাবে পড়বে, আমি কীভাবে সংসার চালাব, বুঝতে পারি না। ধার করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। অনেকে সাহায্যের কথা বললেও এখন কেউ খবর নেয় না।”

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুবেল রানা বলেন, “নুপুরের বিয়ের জন্য উপজেলা তহবিল থেকে এক লাখ টাকা এবং সমাজসেবা অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নুপুরের শিক্ষাভাতা, ভারতীর বিধবাভাতা ও জয় রবিদাসের জন্য দোকান বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

ঘটনার পর ভারতী রানী তারাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে নিহত রূপলালের পরিবার অভিযোগ করেছে, মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

Tag :
Popular Post

তারাগঞ্জে বিয়ের দিন ঠিক করতে গিয়েই গণপিটুনিতে নিহত রূপলালের মেয়ের বিয়ে আজ

Update Time : 07:48:17 pm, Sunday, 2 November 2025

শফিউল মন্ডল (রংপুর) প্রতিনিধি :রংপুরের তারাগঞ্জে আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন নুপুর রবিদাস। সাজানো হয়েছে গেট, প্যান্ডেল ও আলো ঝলমলে সাজসজ্জা। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য জবাই করা হয়েছে তিনটি খাসি। কিন্তু এই আনন্দঘন মুহূর্তেও নুপুরের চোখে নেই হাসি—বাবা রূপলাল দাসের অভাব যেন সব আনন্দকে ঢেকে দিয়েছে।

তিন মাস আগেই মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে গিয়েই গণপিটুনিতে প্রাণ হারান তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর এলাকার রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার প্রদীপ দাস (৩৫)। সেই রক্তাক্ত স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি রূপলালের পরিবার।

গত ১০ আগস্ট ছিল রূপলালের বাড়িতে নুপুরের বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণের অনুষ্ঠান। বরের আত্মীয় হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিঠাপুকুরের বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ রবিদাস। কিন্তু ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জ-কাজিরহাট ছেতরা বটতলায় চোর সন্দেহে স্থানীয়রা রূপলাল ও প্রদীপকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মমভাবে পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয় রূপলালকে। গুরুতর আহত প্রদীপ পরদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এই নির্মম ঘটনার পর স্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবারটি। স্থগিত হয় বিয়ের সব আয়োজন। তবে আজ, শোকের ভার নিয়েই মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে।

নুপুর রবিদাস বলেন, “আমার বিয়ের আয়োজন হয়েছে, কিন্তু মনের ভেতরে এক গভীর শূন্যতা। বাবা আর দুলাভাইকে যেভাবে মেরে ফেলা হলো, তা ভুলতে পারছি না। আসামিরা অনেকেই এখনো মুক্তভাবে ঘুরছে, কেউ কিছু বলছে না।”

নুপুরের ছোট ভাই জয় রবিদাস বলেন, “বাবা না থাকায় সব দায়িত্ব এখন আমার ওপর। হাট থেকে খাসি কিনেছি, ঘর সাজিয়েছি, উপহার প্রস্তুত করেছি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না, শুধু মামা পাশে আছে।

ভারতী রবিদাস বলেন, “স্বামী ও জামাই দুজনকেই হারিয়েছি। সংসারে তিন সন্তান—তারা কীভাবে পড়বে, আমি কীভাবে সংসার চালাব, বুঝতে পারি না। ধার করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। অনেকে সাহায্যের কথা বললেও এখন কেউ খবর নেয় না।”

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুবেল রানা বলেন, “নুপুরের বিয়ের জন্য উপজেলা তহবিল থেকে এক লাখ টাকা এবং সমাজসেবা অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নুপুরের শিক্ষাভাতা, ভারতীর বিধবাভাতা ও জয় রবিদাসের জন্য দোকান বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

ঘটনার পর ভারতী রানী তারাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে নিহত রূপলালের পরিবার অভিযোগ করেছে, মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।